ঊষ্ণায়ন -২
ধীরে ধীরে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে সেই সব ভালোলাগা চিত্রকল্পগুলো ,
ধোঁয়াটে রক্তিম হয়ে গেছে বনলতা সেনের সেই পাখীর নীড়ের মতো দুই চোখ ।
নক্ষত্রের আকাশ আমি আর দেখিনা সেখানে কেবলই বিষাক্ত কার্বন ,
অমৃতের পুত্র আমরা প্রকৃতিকে দিয়ে গেলাম হাতে ধরে সেঁকো বিষ ।
নিজেরই প্রজন্মের ফুসফুসে ভরে দিলাম আমাদের কীর্তিকলাপের সর্বনাশা কার্বন কণা ।
দরজায় কড়া নাড়লে দেখি ডাক হরকরা বয়ে আনে ক্ষয়ের আর বিনাশ কালের নিত্য নতুন খবর ,
এখানে খরা , ওখানে ঝঞ্ঝা, মহামারী এক প্রদেশ থেকে আরেক প্রদেশে , এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে ।
উত্তপ্ত পৃথিবীতে আজ দেখি মারণ কীটের মহাভোজ ।
কান পাতলেই শুনি ভেঙ্গে চলেছে দ্রুতলয়ে মেরু প্রদেশের হিমশৈল ।
আর মৃত হেলবাট মাছেদের সারি সারি শব ডাঙ্গার উপর ,
তাদের শেষ আস্তানাটুকুও গতকাল শুষে নিয়েছে গ্যাস কোটরে আটকে পড়া তপ্ত সূর্যের টুকরোগুলো ,
আজ আর সেখানে বৃদ্ধরা তাদের পুরাণ গাথা শোনায়না
গল্প-গাথা হারিয়ে গেছে প্রকৃতির ভয়ঙ্কর বেখেয়ালে ।
প্রবীণ কৃষক বুঝি আবহ ভাষা ভুলে গেছে বহুকাল ।
প্রকৃতির কোল ঘেঁষে থাকা মানুষগুলো তাই আজ খুবই ভীত ও উদ্ভ্রান্ত ।
কবির কলম থেমে গেছে বহুকাল , ধানসিঁড়ি নদী আজ এক মজা শুকনো নালা , নাকি তাও নয় !
আর আমরা সেই শ্রেণীবদ্ধ জল্লাদের , এক জীবন্ত বিজ্ঞাপন ।
অকুতোভয় সভ্যতার চীর অভিলাষী এসব দেখেও দেখিনা ।
জনপদ উজাড় করতে আমরা তাই রেখে গেলাম সহস্র অর্বুদ কার্বন-পদ চিহ্ন আর অর্জিত তীব্র ধিক্কার,
আমাদেরই সন্তানের জন্যে এক ধোঁয়াটে ভবিষ্যৎ ।