বিবর্ণ মৃত্যুর মিছিল -১    জাম বনি

অনেক খবরের মাঝে ওটাও একটা  খবর

একটু বিস্তৃত , কিন্তু অতটাও নয় যে দুবার পড়তে হবে ।

সংবাদ মাধ্যম এখনও সময় করে উঠতে পারেনি বিশদ ভাবে বোঝার যে

সেই সন্ধ্যায় কি হয়ে ছিল ?

সেদিন কি বৃষ্টি একটু বেশি সময় ধরে পড়ছিল?

সেদিন কি রাস্তায় কোন আলো ছিলনা ?

আর কুকুরেরা? যারা পথ চলতি মানুষ দেখলেই চিৎকার করে ,

ওরা কি সবাই যে যার বারান্দা ধরে নিয়েছিল , নিশ্চিন্ত বারান্দা ।

একলা ফোন বেজেই গেল … ছেলের টা কেউ ধরল না , বউয়ের টাও নয় ,

আর মায়ের চোখ ঠায় তোরণের দিকে , পুরনো ছবিগুলোর পুনর্নির্মাণ , কেউ যেন দিন গুলো পিছনে টানছে …।

সামনে  তীর বুকের বাঁ দিক ঘেঁষে কাঁপছে আস্তে আস্তে , কেউ বুদ্ধি করে আধখানা কঞ্চি কেটে নিয়েছে ,  মানুষটার নিশ্বাস ধীরে ধীরে ফিকে হচ্ছে , মুখে বিড়বিড় কিছু আওয়াজ ।

তীরটার সামনে দু খানা ফলা ছিল , আর মৃত্যু নিশ্চিত করতে খুব কাছে থেকে তুন তানা হয়েছিল…………..

 

ভিজে  জমিতে গতকালই পাশের গাঁয়ের বউ ঝি মিলে ধান রোয়া  সারা করে গেছে ,

তাদের  ফেলে যাওয়া গায়ের আঁশটে গন্ধ ছাপিয়ে আল পথের ফাঁক দিয়ে জল পড়ার একটানা অবিশ্রাম আওয়াজে ধান চারা গুলোর  গোড়া শিথিল হচ্ছে ক্রমশ ,

থমকে থাকা পেট্রলের এক বিষণ্ণ ধোঁয়া ভেজা কুয়াশাকে আরও ভারি  করে রেখেছে  ।

আধশোয়া  বাইকটা একটু দূর থেকে ওর মালিকের সাথেই  শেষ  ধড়পড়ানি টুকু ভাগ করে নিচ্ছিল এই কিছুক্ষণ আগেও।

এখন জলের আওয়াজ অনেকটাই গা সওয়া হয়ে গেছে নিথর শরীরটার।

বাইকের ইঞ্জিন ও থেমে গেছে ,

মোবাইল টা বন্ধ হয়ে গেছে সবার আগে ।

সকালের আকাশ সবুজ চারা গুলোর মাঝখানে রং ঢালার আগেই  কেউ জলে সিন্দূর মিশিয়ে গেছে  ।

ফিসফিস কিছু আওয়াজ এগিয়ে আসছে চারিদিক ঘিরে ,

খুব সম্ভব একটা পুলিসের গাড়ির  সাইরেনও শোনা যাচ্ছে এগিয়ে আসতে দ্রুত গতিতে।

এবার খবরের  গায়ে রং লাগবে , রক্তের চেয়েও  গাঢ কোন রং

এবার খবর বিকোবে চারিদিক , রাজনীতি , সন্ত্রাস , নির্বাচন ,   গোষ্ঠী দ্বন্ধ এই সব  শব্দ গুলোর ওপর  বিছানো হবে ওই গলা ফালা করে দেওয়া শরীরটা । রাজধানী থেকে নেতারা আসবে স্বত্ব দাবি করতে , মৃতদেহের ওপর স্বত্ব।

আর রাত বাড়লেই দূরদর্শনে  জোর আলোচনা হবে সেই শবের দল ভুক্তি নিয়ে ,জীবনের চেয়ে মৃত মানুষের  দাবিদার  চিরকালই  কয়েকগুণ  বেশী।

এবার  কিছু লোক টানাটানি করবে , দলাদলি করবে শব দেহ ঘিরে ।

কিছু কাগজের সপ্তাহান্তের রসদ ।………

 

আর  কাল রাতের  সাক্ষী কুকুরগুলো  গুটিশুঁটি  মেরে বারান্দা ছেড়ে  দাঁড়াবে এসে রাস্তায়  আর

ভীত , সন্দিগ্ধ চোখে  খেয়াল রাখবে

দুপেয়ে নৃশংসতা থেকে দূরত্বটা  যেন কমে না যায় কোন ভাবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *