পার্থ মিশ্র
এসো আমরা অন্ধকারের কথা বলি , নিয়নের আলো থেকে একটু দূরে যেখানে একলা ঝিঝি ভয়ে চুপ করে আছে , দিন রাতের হিসেব হারিয়ে ফেলে ।
চল আমরা রাতের তারাদের কথা বলি , কতদিন স্ট্রীট লাইটের ওপরে যে কোন আকাশ দেখিনি ।
আমরা সেই পথভ্রষ্ট রাতচরা পাখিদের কথা বলি যারা তাদের অনিদ্রাতে ভোগা পরিচিত মহানগরীকে তার কৃত্রিম আলোকমালায় আর খুজে পায়না ।
লাইটহাউসের পিছলোতে থাকা আলোক বর্তিকা আর আলোকোজ্জ্বল আধুনিক জাহাজের অতি রশ্মিতে রত্নাকর সমুদ্রের মধ্যে জলজীব সব আজ সম্পূর্ণ দিশাহারা
রাতভর পাক খেতে থাকা আঁধারের সন্ধানী কীট পতঙ্গের দল ক্লান্ত ভোরে সার সার শুয়ে থাকে রাজ পথে রাতের অবাঞ্ছিত সব আলোর কাহিনী তাদের রঙ্গিন শরীরে মেখে।
দিনান্তের পাণ্ডুলিপির সামনে বনলতা সেনের মুখের উপর আজ আর কোন আলাআঁধারি বেঁচে নেই ,
সেখানে তীব্র বৈদ্যুতিক আলোয় সেই সব চিত্রকল্প নগরীদের হারিয়ে তার মুখের ওপর জেগে ওঠে আলোক-প্রদুষন কাঠিন্যের শহুরে বলিরেখা ।
আদুরে নরম সেই ছায়াদের কথামালা ফেলে এসেছি আমরা আমাদের বানানো আলোক স্তম্ভের উজ্জ্বলচ্ছটার পেছনে সভ্যতা আর বিকাশের দোহাই দিয়ে ,
সবুজ অন্ধকারদের তাড়িয়ে সেখানে বসিয়েছি আলোর রোশনাই ;
আঁধারকে আমরা হারিয়েছি আলোর এক সংযমহীন পিপাসায়,
আজ দিগন্তজুড়ে নিয়নের উজ্জ্বল আলো ,আর ক্রমাগত যান্ত্রিক নিঃসরণে
উল্টোমুখি আমাদের জৈবিক অভ্যেস ,
ভারসাম্যহীন আমরা আর আমাদের চারিদিক লিখে চলেছি এক বিপর্যস্ত সভ্যতার ইতিহাস যাকে শুরু করে ছিল এডিশনের এক আবিষ্কার
এসো আমরা ফিরিয়ে দিই সেই সভ্যতাকে তার আঁধার টুকু যার ওপর সে আলোর ইতিহাস তৈরি করবে আবার নতুন করে,
এক সুসংযত , সুবিন্যস্ত দিন আর রাত্রির মায়াজালে।
যেখানে আলো আর আঁধারির দেয়ালাতে , রাতের পতঙ্গের পায়ে পায়ে পরাগ ছড়াবে এক ফুল থেকে আরেক ফুলে ,
যেখানে নিরবিছিন্ন রাতের পর প্রত্যেক সকাল আবার জেগে উঠবে হাজারো পাখির গানে।
এস আমরা আঁধারকে আর হারিয়ে যেতে না দিই , তাকে আলোর সাথে একই ভাবে জাগিয়ে রাখি, আমাদের ঘুম পাড়ানিয়া গানের মাঝে ।