সবিতা তোমার বাবাকে মনে পড়ে ? অফিস ফেরত বাসটা পাড়ার মোড়ের আগেই চাপা দিল
কয়েক ভাইবোনের বড় সংসার তোমার মায়ের কাঁধের চেয়ে তো অনেকই বড় ছিলো।
বড় ভাই পড়া ছাড়ল, পরেরটা পাড়া,
পেটে খিদে আর চোখে আগুণ , কি বা ছিল করার শুধু মাস্তানি ছাড়া .
দিদির প্রেমিক পালাল, দিদিকে নিয়ে
সবিতা তোমাকেও তো অনেকে তখন ইশারা করত কুঃদৃষ্টি দিয়ে।
পাড়ার ছেলেরা ছুঁড়ত কাগুজে বিমান , আর শরীর ছুঁতে চাইত মাস্টার মশাই ,
সবিতা তোমার তো বিয়ে হয়ে ছিল মাধ্যমিকের আগেই ?
বাল্য বিবাহ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি , ওঠেনি কোনখানে কোন কথা,
এতটুকু মেয়ে স্কুল ছেড়ে গেল তাতে হবেই বা কার মাথাব্যথা ?
মায়ের শরীর শীর্ণতর , পরিবার ছন্নছাড়া,
সবিতা তুমি বাড়ি ছাড়লে , একবারও কাঁদেনি পাড়া।
মদ্যপ স্বামী , কুচক্রী শাশুড়ি
কোনদিন পণের টাকা , কোনদিন মোটর গাড়ী
তোমাকে হেনস্থার অজুহাত চিরকালই কাঁড়ি কাঁড়ি।
পড়শির চোখে ঠুলি , আত্মীয়েরা তেমনই মৌন,
সবিতা সেদিনও কেউ গলা তোলেনি তোমার জন্য ।
জঠরে মদ ছিল , শরীরে জরা ছিল, মরাটা বাকি ছিল , জানত সকলেই ,
বিধবা তুমি হলে , সধবা কবে ছিলে ? প্রশ্ন শুধু কেন তোমাকেই ?
পড়শি জেগে গেল , পাড়াতে রব হল , উঁকি ঝুঁকি বাড়ে দরজায়,
বিধবা একাকী মেয়ে, সবাই দেখে চেয়ে চেয়ে , আলাপ জমাতে কে না চায়।
বন্যপ্রাণীদের প্রাদুর্ভাব দরজায় ,
আঁচড়ের দাগ হামেশা দেখা যায় ,
লাল মেঘ দেখে ভয় পেলে তুমি , আবার সিদুর মাখল তোমার কপাল ,
সুখটা পাওনা ছিল অনেকদিনের , দুঃখ নাহয় অপেক্ষায় থাক আপাতত কিছুকাল।
গা ভরা গহনা হল , বাড়ি ঘর সবই হল , ছেলে মেয়ে সুখের সংসার ,
তোমাকে রানী করে , পরম সোহাগ ভরে , সুখ বুঝি উপচায় আধার ।
হটাতই মৃদু কম্পন সারা হৃদয় জুড়ে, অবশ হাত অবশেষে ছাড়ল তোমায়
হটাতই যতি সেই সুখে তাই
তুমি যে বিধবা হলে , কতটা কষ্ট পেলে দেখতে এলাম আমরা সবাই ।
কোথায় কান্না , ক্লেশ , কোথায় বা শোকবেশ , চাইলেনা তো কোন আশ্রয়
দেখাব সমবেদনা ,এটুকুই তো পাওনা , সেটুকুও কেড়ে নিলে এসময়
চোখে জল কোথায় , চুলের বিন্যাস অটুট , শরীর এখনও হলনা কেন ভঙ্গুর ?
অনেকই প্রশ্ন ছিল , অনেকই আশা ছিল , সবিতা তুমি সত্যিই খুব নিষ্ঠুর ।
সবিতা ভালো আছো ? কি করে ভালো আছো ? আমরা তবে কেন ভালো নেই
এ কেমন সুখে থাকা, বেঁচে থাকা, ভালো থাকা, অন্যের অনুকম্পা ফিরিয়ে দিয়ে
সবিতা তোমায় দেখতে এলাম , এসে বড় হতাশ হলাম , ফিরে যাচ্ছি মনকষ্ট নিয়ে ।